তোমরা বিশ্বখ্যাত রাইট ব্রাদার্স নামে পরিচিত উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট নামের দুই ভাইয়ের কথা শুনেছ নিশ্চয়। এই দুই ভাই ১৯০৩ সালে পৃথিবীর আকাশে প্রথম মানুষ বহনযোগ্য উড়োজাহাজ ওড়ান। মজার বিষয় হলো, এই উড়োজাহাজ বানাতে গিয়ে তারা বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বহুকাল (১৪৮৫) সাল) আগে আঁকা ছবি 'অনিস্টার' (Ornithopter) নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন। প্রায় ৫০০ বছর আগে ভিঞ্চির কল্পনার পাখার বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন এই দুই প্রকৌশলী। তাই এমন তো হতে পারে, আজ আমরা যা আগামীর বলে স্বপ্ন দেখছি, খুব শিগগির তা হয়ে উঠতে পারে বাস্তব ও বর্তমান। বর্তমানে আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বার প্রান্তে অবস্থান করছি। এই প্রযুক্তিগত বিপ্লব আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতি, আমাদের কাজের পদ্ধতি এবং মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের উপায়কে ভীষণভাবে প্রভাবিত করবে।
ভাবতে অবাক লাগে, কিছুদিন আগেও আমরা থ্রিডি প্রিন্টারের কথা কল্পনায় দেখতাম। কিন্তু এখন সেটা আমাদের সামনেই উপস্থিত। রোবটের নানা কাহিনি তো আমাদের অতীত কল্পনাকেও হার মানাতে যাচ্ছে। আরও কত কী যে আসবে ক'দিন পর। মানুষের জায়গায় রাজত্ব করবে মানুষের হাতে তৈরি রোবট! কারও চাকুরি থাকবে, কারো থাকবে না। ভবিষ্যৎ দুনিয়ায় নিজের জায়গা করে নিতে হলে লাগবে অনেক বুদ্ধি, অনেক দক্ষতা আর নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা। ভিঞ্চি শত শত বছর আগে তাঁর কল্পনায় উড়ার ছবিতে ভরিয়ে তুলেছিলেন The codex on the flight of bird নামের খাতা। উড্ডয়ন সম্পর্কিত এমন দূরদর্শী চিন্তাভাবনা অন্যদের দিয়েছে স্বপ্ন জোড়ার কাঁচামাল। আমাদেরও অজানা ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে দূরদর্শী ও বিচক্ষণ হতে হবে। এসো, আমরা এবার কিছু নতুন বিস্ময়ের সঙ্গে পরিচিত হই।
নিচের ছবি দেখে যে শব্দ বা শব্দগুলো বা বাক্য প্রথমেই মনে পড়ে, তা ছবির পাশে লিখি-
ভবিষ্যতের গল্প
২০৬২ এর এক দিন
ইলমা ঘুমানোর আগেই ঠিক করে নিলো যে আগামীকাল সে কোনোভাবেই স্কুলে যেতে দেরি করবে না; কাল বেশ মজার একটা ক্লাস হওয়ার কথা। ইলমা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে; আগামীকাল হলো ২৭ আগস্ট, ২০৬২।
ঠিক সকাল সাতটায় তার অ্যালার্মওয়ালা বালিশ আস্তে আস্তে নড়া শুরু করল। ইলমা চট করেই উঠে পরল; হাতের ইশারায় ঘরের পর্দা নিজে নিজেই খুলে গেল; বিছানাও নিজে নিজে গুছিয়ে গেল। বাইরের আবহাওয়া চমৎকার, নীল আকাশ, খুব একটা গরমও না, হাল্কা হাল্কা বাতাস, বাইরের দৃশ্য একদম সবুজ, গোল গোল বাড়ি, কিছু উড়ন্ত গাড়িও দেখা যাচ্ছে। উড়ন্ত গাড়ী হওয়ার পর রাস্তার কোনো দরকার ছিল না বলে ইলমার মনে পড়ল; এই জন্য আজকাল সব সবুজই হয়ে থাকে।
ইলমা বাথরুমে গিয়ে আয়নার স্ক্রিনের সামনে ইশারা দিল এবং টিপ দিয়ে ঠিক করল আজ কোন ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করবে; আপনা আপনি এক চিকন কল দিয়ে ট্রুথপেস্ট বের হয়ে আসল টুথব্রাশের ওপর। দাঁত ব্রাশ করতে করতে আয়নায় দেখে নিল আজকের দিনের রুটিন কী। গত রাতে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো থ্রিডি মাইক্রোওয়েবে কী কি নাস্তা তৈরি হবে; টেবিলে গিয়ে দেখে তাদের অনেক দিনের বিশ্বস্ত রোবট, তাঁরা ৩.০, নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে। রোবট তাঁরা ৩.০ বলল, “ইলমা, সকাল থেকেই তোমার শিক্ষা ড্রোন, বল্টু ৫.১, রোদে চার্জ নিচ্ছিল; বল্টু এখন প্রস্তুত।” ইলমা বলল, “ঠিক আছে, নাশতা খেয়েই বের হচ্ছি।”
-আজ তোমার সেই ইন্টারপ্ল্যানেটোরি ক্লাস না?" মা যাওয়ার টেবিলেই দৈনিক অগমেন্টেড খবর দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল ইলমাকে। খবরের বিভিন্ন চরিত্র হলোগ্রাফিকভাবে টেবিলের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাবা আরও জানাল, “আজ সকালের খবরেও এই নতুন ক্লাসের কথা বলা হয়েছে। সাবধান থেকো কিন্তু নতুন প্রযুক্তি যেহেতু!”
মা তখন বললেন, 'কী আর হবে? এই প্রযুক্তি নিয়ে তো আমরা বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করে ফেলেছি। মা আসলে আন্তঃগ্রহ সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ, তিনি দুই গ্রহের মধ্যে যা যা হচ্ছে উন্নয়ন, প্রযুক্তি, ব্যবসাবাণিজ্য, রাজনীতি, ইত্যাদি খেয়াল রাখেন। তবে বাবা আবার মঙ্গল গ্রহের গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন।
বাবা বললেন, “তা হোক, কিন্তু স্কুলে তো এই প্রথম। ইলমা, কয়েক মাস আগে তো আমরা ঘুরে এলাম, খেয়াল রেখো যে মঙ্গল গ্রহের যেদিকে তোমরা নামবে, এখানে শীত পড়ে গেছে। শীতের কাপড় নিয়েছ তো?'
ইলমা বললো, 'বাবা, আমি তো আমার ছয় ঋতুর ডিজিটাল কাপড় পরে আছি। তাপ অনুযায়ী কাপড়ের ধরন বদলায়। দরকার হলে ওখানে গিয়ে আরেকটা কিনে ফেলব, ওখানে তো জিনিসপত্রের দাম এখনও কম।'
তাঁরা ৩:০ তখন তাদের জানালো, “ইলমা, তোমার উড়ন্ত বাসের স্কুল চলে আসবে পনেরো মিনিটে।আরেকটু খেয়ে ইলমা বেরিয়ে পড়ল বাসের উদ্দেশে। তার উপরে উপরে বল্টু ৫.১ তার সঙ্গে সঙ্গে এগোতে থাকল। বল্টু এমনিতে খুব একটা বড় না; ইলমার দুই মুঠোর সমান, কিন্তু ইলমা যেখানেই যায় সেখানেই সে উড়তে থাকে।
ইলমা তার শিক্ষা ড্রোনকে জিজ্ঞেস করল, 'বল্টু বল তো, আজকে আমাদের কী নিয়ে ক্লাস হবে এবং কী বিষয়: নিয়ে চিন্তা করতে বলেছিল?"
বল্টুর থেকে প্রজেক্টরের মতন আলো বের হলো। এখন মাটির দিকে আলো, বললেই সে যে কোনো জায়গাতেই আলো দিতে পারে। ইলমা পড়ে বুঝল যে, আজ তাদের মঙ্গল গ্রহের মানুষের বিভিন্ন পেশা নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।
বাসে বসে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে একটু কথা বলে ইলমা তার ডান হাতের মুঠো খুলে বাম হাত দিয়ে ইশারা করে রাশেদকে কল দিল। রাশেদের হলোগ্রাফিক চিত্র ইলমার মুঠোর ওপর চলে এল। রাশেদ তার উত্তপ্ত হুইল চেয়ারে।
'রাশেদ, তুমি প্রস্তুত?'
“হ্যাঁ, ইলমা, বাসে বসে মঙ্গল গ্রহ নিয়ে আমাদের ম্যাডামের বক্তব্য শুনছি। কেমন লাগছে তোমার?”
“এইতো, ভাবতেই একটু ভয় লাগছে যে এই কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন কীভাবে কাজ করবে। আমরা এক দিকে পৃথিবীতে নাই হয়ে যাব আর অন্য দিকে মঙ্গল গ্রহে ফুটে বের হবো?” “তাই তো, বক্তব্য শুনে যা বুঝলাম, তুমি টেরই পাবে না'।
“ঠিক আছে, রাশেদ, তুমি তাহলে বক্তব্য শুনতে থাকো। আমি বরং আমাদের প্রজেক্টের কাজ একটু এগিয়ে রাখি; মঙ্গল গ্রহের পেশা আর পৃথিবীর কিছু পেশা নিয়ে একটা তালিকা বানিয়ে ফেলি ।রাশেদের হলোগ্রাম মুঠো থেকে চলে গেল। বল্টুকে ইশারা দিয়েই ইলমা কাজ করতে থাকল দলের গবেষণারবিষয় নিয়ে। বাসে যেতে যেতেই ইলমা দেখল, জানালার বাইরে বিভিন্ন রোবট ও মানুষ বিভিন্ন রকমের কাজ করছে। মানুষের কাজ দেখে তাদের পেশা অনুমান করতে পারছে। ‘বল্টু, বাইরের দৃশ্য সমানে স্ক্যান করতে থাকো তো, আর আমাকে বলো, কী কী পেশার মানুষ তুমি দেখতে পারছ।'
শিক্ষা ড্রোন তার আলো তখন ইলমার সামনের সিটের পিছনে ছুড়ে মারলো এবং ইলমা দেখল যে বল্টু তাৎক্ষণিকভাবেই ১৪টি পেশার তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। জানালার বাইরে তাকিয়ে ইলমা নিশ্চিত করল কয়েকটি পেশা- এলাকার বিভিন্ন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রোবট ঠিক করে দেওয়ার জন্য দুই তিন জন পরিচ্ছন্নতা রোবট শিল্পী, পুলিশ টাওয়ার থেকে এলাকার বিভিন্ন পুলিশ রোবটের কাজ তদারক করছে একজন, কন্ট্রোল টাওয়ারে বসে 'ঢাকা টু মঙ্গল' বাসের যাতায়াত মনিটর করছেন বাসের সুপারভাইজার ইত্যাদি।
বাস উড়তে উড়তে পৌঁছাল এক সবুজ মাঠের ওপরে। মাঠের মাঝখানে তিনটি বড় বড় গর্ত; গর্তের চারপাশে বাসের ভিড় এর ভেতর দিয়েই বাসসহ সবাই যাবে মঙ্গল গ্রহে।
ক) গল্পটি কেমন লাগল?
খ) গল্পটি কি সম্ভব না অসম্ভব?
গ) গল্পের সবচেয়ে বেশি বিস্ময়কর অংশ কোনটি?
তোমার এলাকা এখন যেমন আছে, ৪০ বছর পরেও নিশ্চয়ই সেরকম থাকবে না। অনেক কিছুই বদলে যাবে। হয়তো অনেক কিছুই যন্ত্রের দখলে চলে যেতে পারে। অথবা এমনটি না-ও হতে পারে।
৪০ বছর পরে তোমার এলাকার প্রত্যাশিত ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে একটি গল্প লেখ বা ছবি আঁকো।
উপরের যে প্রযুক্তি সম্পর্কে তোমরা কিছুটা জেনেছ, কিছুদিন আগেও এই প্রযুক্তি ছিল স্বপ্নের মতো। বর্তমানে এসব প্রযুক্তি বাস্তবে রূপ নেওয়া শুরু করেছে। এই ধরনের প্রযুক্তি যখন বাস্তবে সাধারণ মানুষের আওতায় চলে আসবে তা আমাদের ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও পেশাগত জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। এমন একটি প্রযুক্তি হলো চালকবিহীন গাড়ী। চালকবিহীন গাড়ী যখন পুরোপুরি চালু হবে, তখন কী হতে পারে, চলো একবার ভেবে দেখি।
ভবিষ্যৎ চক্র এঁকে তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছো, নতুন প্রযুক্তি পেশার জগতকে কতখানি বদলে দিচ্ছে, বদলে দিচ্ছে আমাদের দক্ষতার ধরণও। এই বদলে যাওয়া দক্ষতায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করতে হবে; তাতে যেকোনো পরিবর্তনে টিকে থাকা সহজ হবে। ঢেউয়ের সাগরে তীর হারিয়ে ফেললেও আমরা পাড়ি দিতে পারব। তাই চলো, স্বাগত জানাই নতুনকে, আগামীর স্বপ্ন পূরণে নিজেকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলি আর নতুনকে জয় করার শপথ নিই -
দক্ষ হয়ে নিত্য নতুন প্রযুক্তিতে
করবো জয় বিশ্ব, অবিরাম গতিতে।
তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ, পিপীলিকা ছয় পা দিয়ে খাবারের সন্ধানে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। কী যে পরিশ্রম করে তারা যাবার মুখে করে বয়ে নিয়ে যায় নিজের ঠিকানায়। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে তারা এ কাজ করতে থাকে আগামী ছয় মাসের খাবার জোগাড় করার জন্য। কী কষ্টই না পিঁপড়েরা করে একটি নিশ্চিন্ত আগামীর জন্য। এসো, পিঁপড়ে ও ফড়িং নিয়ে ঈশপের একটি গল্প পড়ি-
গ্রীষ্মের এক চমৎকার দিনে ঘাসফড়িং তার ভায়োলিনটি নিয়ে গান গাইছিল, নাচছিল আর খেলা করছিল মনের আনন্দে। হঠাৎ সে দেখতে পেল একটা পিঁপড়া অনেক কষ্ট করে খাবার বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঘাসফড়িং পিঁপড়াকে বলল, এত কষ্ট করছ কেন ভাই? এসো আমরা খেলা করি, গান গাই, নাচি'।
পিঁপড়া বলল, “আমাকে অবশ্যই এখন শীতের জন্য যাবার সঞ্চয় করে রাখতে হবে। তুমিও সময় নষ্ট না করে খাবার সংগ্রহ করে রাখো বন্ধু।' 'আরে শীতকাল আসতে তো এখনও অনেক দেরি, এসব নিয়ে চিন্তা করো না'- ঘাসফড়িং হাসতে হাসতে জবাব দিলো। পিঁপড়া কোনো কথা না বলে খাবার নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা হলো। গ্রীষ্মশেষে শীত এলো জাঁকিয়ে। ক্ষুধায় কাতর ঘাসফড়িং কাঁপতে কাঁপতে পিঁপড়ার বাড়ি এলো। আমায় কিছু যেতে দেবে ভাই'- ঘাসফড়িং বলল পিঁপড়াকে। পিঁপড়া বলল, “অপেক্ষা করো আজ তোমায় নিচ্ছি। তবে কাল থেকে তোমার যাবার কিন্তু তোমাকেই যোগাড় করতে হবে। তুমি যদি সেদিন আমার কথা শুনতে, তাহলে আজ তোমাকে আমার কাছে আসতে হতোনা আর ক্ষুধার কষ্ট পেতে হতোনা।
তোমাদের একটু পুরোনোদিনে ফিরিয়ে নিই। এই অঞ্চলে একসময় নায়েরা রান্নার জন্য প্রতিবেলায় যে চালটুকু লাগতো তা হাড়িতে নেয়ার পর সেখান থেকে একমুট চাল আলাদা পাত্রে/কলসে তুলে রাখতেন। এভাবে রোজ রাখতে রাখতে মাসশেষে ঐ পাত্রে অনেকখানি চাল জমে যেত। সেটা হতো তাদের সঞ্চয়। তখনকার দিনে মায়েরা সংসারের অনেক বিপদ পার করতেন এই মুটচালের সঞ্চয় দিয়ে। সঞ্চয়ের কথা বলতে গেলে শুরুতেই আসে আয়ের কথা। মানুষ বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারে, যেমন- কোনো নির্দিষ্ট কাজের বিনিময়ে। পারিশ্রমিক হিসেবে, ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে, কোনো পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে এর বিনিময় করে ইত্যাদি। তোমরা কি আয় করো? কি মনে হয় তোমাদের?
হ্যাঁ, তোমরাও আয় করো, তবে তোমাদের আয়ের ধরন হয়তো ভিন্ন। এই যেমন ধরো, তোমাদের বৃত্তি/ উপবৃত্তির টাকা, টিফিনের টাকা, ঈদ-পূজায় প্রাপ্ত সেলামি প্রনামির টাকা, জন্মদিন বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পাওয়া টাকা ইত্যাদি। আবার, তোমাদের কেউ কেউ নিজেরা বিভিন্ন কাজ করেও অর্থ উপার্জন করতে পারো; যেমন- ইউটিউবে নিজের তৈরি বিভিন্ন সৃজনশীল কনটেন্ট আপলোড করে, জমিতে চাষের কাজে সাহায্য করে, দোকানে কাজ করে, নিজের বানানো মজার খেলনা বিক্রি করে ইত্যাদি উপায়ে অনেকেই টাকা আয় করে থাকো। উপহার হিসেবে বা অন্য কোনো উপায়ে প্রাপ্ত অর্থ হয়তো তোমরা মনের সুখে খরচ বা বায় করে ফেলো। কখনো মজার কোনো খাবার কিনে খাও, কখনো হয়তো খেলনা কিনে খরচ করো কিংবা বেড়াতে যাও ইত্যাদি। এতে তোমাদের হাতে আর কোনো টাকাই অবশিষ্ট থাকে না। যদি কোনো বিশেষ প্রয়োজনে তোমাদের কিছু কিনতে হয়, তাহলে কী করবে বলো তো! আমাদের কিছু প্রয়োজন হলে আমরা সাধারণত মা- বাবা কিংবা ভাই-বোনদের কাছে চেয়ে নিই, কিন্তু ধরো, তোমার নিজের কাছে যদি কিছু টাকা গচ্ছিত থাকে, তাহলে তো তুমি এই টাকা দিয়েই তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনতে পারতে, তাই না?
আমরা যখন কোনো প্রয়োজন মেটাতে কিছু কেনাকাটা করি, তখন আমাদের আয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ কমতে থাকে। এভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা যে আয় করি তা থেকে ব্যয়ের পর অবশিষ্ট যে অর্থ থাকে, তা-ই সঞ্চয়। অপচয় পরিহার করে, মিতব্যায়ী হয়ে অর্থ সাশ্রয় করাটাও কিন্তু সঞ্চয়ের মধ্যে পড়ে। মনে করো, গত ঈদ বা পূজায় তুমি ১০০ টাকা উপহার পেয়েছ, ওটা তোমার আয়। এখন ওই টাকা থেকে তুমি যদি ৫০ টাকা দিয়ে কোনো খেলনা কিনে থাকো, তারপরও তোমার কাছে ৫০ টাকা জমা থাকছে, এটা হলো তোমার সঞ্চয়। আর যদি পুরো টাকাই খরচ করে ফেলো, তাহলে কিছুই সঞ্চয় থাকল না।
এবারে তোমরা একটু মনে করে দেখো তো, গত এক বছরে তোমাদের কেউ কোনো টাকা আয় করেছ কিনা? যেমন- সেলামি/প্রনামি/উপহার হিসেবে, যাতায়াতের বা টিফিনের খরচ বাবন, নিজের লাগানো গাছের সবজি বা ফল অথবা নিজের পালিত হাঁস/মুরগির ডিম বিক্রয় ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত আয়। তোমাদের এই আয় করা টাকা তোমরা কীভাবে খরচ বা বায় করেছো? অথবা কত টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছো।
সব সময় একটা কথা মনে রাখবে, আমাদের আয় ব্যয় যা-ই হোক না কেন, সেটা অবশ্যই বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জানাব। আমাদের হাতে কখন, কোথা থেকে কত টাকা এল এবং সেগুলো কীভাবে খরচ করলাম কিংবা জমালাম জমানো বা সঞ্চিত অর্থ কীভাবে খরচ করা বা কাজে লাগানো যায় তা তাদেরকে জানানোর পাশাপাশি তাদের পরামর্শও নিতে পারি। এতে তারাও আমাদের ওপর অনেক খুশি থাকবেন। সুতরাং তাদের না জানিয়ে কোনো কাজ করা একদম ঠিক হবে না। তাদের কাছে আমাদের সব সময় স্বচ্ছ থাকতে হবে।
এবার এসো, আমরা একটু হিসাব-নিকাশ করি। তোমাদের জীবন ও জীবিকা খাতায় নিচের ছকটি এঁকে নাও। ঢুকে তোমার আয় ও ব্যয় লিখে রাখবে। বাম পাশে অবশ্যই তারিখ লিখবে। এমন হতে পারে, পুরো মাসে কেউ হয়তো এক টাকাও হাতে পেলে না, তা নিয়ে একদম মন খারাপ করবে না। পরের মাসের জন্য অপেক্ষা করো। যখন টাকা হাতে পাবে, তখন লিখবে। মনে রাখবে, খরচের খাত নির্বাচনে প্রয়োজন ও পছন্দ বিবেচনায় রাখতে হবে।
রানুর স্বপ্ন
রামুনের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়। ওর বাবা সাগরে মাছ ধরেন। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে যা টাকা পান, তার সবটুকু দিয়েই তিনি চাল-ডাল ইত্যাদি কেনেন। এভাবেই তাদের খাওয়া পরা চলে। রামুর খুব শখ স্কুলে যাওয়ার, কিন্তু ওর বাবা ওকে সঙ্গে করে সাগরে নিয়ে যান। বাবাকে সাহায্য করতে গিয়ে রানুও মাঝে মাঝে দু-চারটি মাছ ধরে। ও তার বাবার কাছে আবদার করে বলে, 'এই মাছ ব্যাগগুন কিন্তু তাঁর (এই মাছগুলো কিন্তু আমার)।' ওর বাবা হেসে বলেন, 'এই ওগগা মাছ দিয়েরে তুই কী গরীবি দে (তুই কী করবি এই একটা মাছ দিয়ে)?" রামু মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, "কিয়াল্লাই অবাজি, বেচচুম আর টিয়া পিয়েরে মজা গরি খাইয়ুম দে (কেন বাবা! বেচব আর টাকা দিয়ে মজা যাবো)!' কিন্তু আসলে রামু একটা টাকাও নষ্ট করে না। ওর ধরা মাছগুলো বাজারে বিক্রি করে টাকাটা সে তার মায়ের হাতে তুলে দেয় জমা রাখার জন্য। এরই মধ্যে একদিন। সাগরের ঝাড়ের তোড়ে ওদের ঘরের চালা উড়ে যায়। রামুর বাবার তো মাথায় হাত! মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে কোথায়! এগিয়ে আসেন রামুর মা। একটু একটু করে এতদিনের জমানো টাকাগুলো বের করে আনেন। টিন কিনে মেরামত করেন তাদের সেই ঘর। রামুর বাবা ভাবেন, কোথা থেকে এল এই টাকা! সব শুনে তিনি রামুর ওপর খুব খুশি হন। ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, 'ও বাপ, তর আজিয়ার তুন আর দরিয়ার যন ন পরিব, তুই এখনত তুন স্কুলত যাবি। আর আই প্রতাদিন ১০ টিয়া গরি তোর কাছত জমা রাখি দিয়ুম বাজান (বাবা, আজ থেকে তোকে আর সাগরে যেতে হবে না, তুই স্কুলে যাবি। আর আমি প্রতিদিন ১০ টাকা করে তোর কাছে জমা রাখব)।'
ক) তোমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সফরের সুবিধাগুলো উল্লেখ করো।
খ) ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে তোমরা মনে করো?
সঞ্চয় বিপদের বন্ধু। দুর্যোগ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে, ব্যক্তির আয় বন্ধ হয়ে গেলে বা সম্পদ বিনষ্ট হলে, হঠাৎ করে অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে এমনকি মৌলিক চাহিদা পূরণ করাও কষ্টকর হয়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সঞ্চয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের বিভিন্ন ইচ্ছা পুরণের জন্যও সঞ্চয় করা প্রয়োজন। মা দিবসে কিংবা বাবা দিবসে অথবা ভাই-বোন, বন্ধুদের জন্মদিনে আমরা বিভিন্ন উপহার দিতে চাই। হতে পারে সেটা নিজ হাতে বানানো কোনো জিনিস কিংবা কিনে দেওয়া কিছু। তবে উপহার বানিয়ে কিংবা কিনে দিতে হলে আমাদের কিছু না কিছু টাকা প্রয়োজন। এই টাকা আমরা সঞ্চয়ের মাধ্যমে পেতে পারি। এ ছাড়া বই, খেলনা বা পছন্দের ব্যাগ ইত্যাদি কিনতে আমাদের সঞ্চয়ের টাকা কাজে লাগাতে পারি। আবার মা-বাবারও অনেক সময় টাকার প্রয়োজন হয়। তখন যদি ছোটরা নিজেদের সঞ্জয় থেকে তাদের সাহায্য করতে পারে, তবে সেটা অনেক সময় যেমন গর্বের হয়, তেমনি মা-বাবার জন্য অনেক উপকার হয়। যেকোনো বয়স থেকেই সঞ্চয় করা যেতে পারে সঞ্চয়ের জন্য মূল বিষয় হলো ইচ্ছে এবং সঞ্চয়ের কৌশল সম্পর্কে অবগত হওয়া এখন থেকেই আমাদের সঞ্চয়ী হতে হবে।
চলো সবাই শপথ নিই-
বিনা কাজে ব্যয় নয়,
তবেই হবে সঞ্চয়।
এসো সঞ্চয় করি
প্রায় শত বছর আগে সঞ্চয় করার একটি সহজ ও ঝামেলাহীন কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন জাপানি এক নারী। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন 'কাকেইবো'। এর অর্থ হলো পারিবারিক আর্থিক খতিয়ান। কাকেইবোতে হিসাব- নিকাশ রাখা হয় কাগজ-কলমে অর্থাৎ আর্থিক ডায়েরিতে। কাকেইবো অনুসরণে কোনো কিছু কেনার আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে-
কোনো কিছু কেনার আগে নিজেকে উপরের প্রশ্নগুলো করলে হয়তো তুমি যা কিনতে চাচ্ছ তা কেনার যৌক্তিক কারণ জানতে পারো অথবা কেনার ইচ্ছা ত্যাগও করতে পারো। ফলে অযৌক্তিক বা অযথা যা বায় করতে যাচ্ছিলে তা পরিণত হবে তোমার সঞ্চয়ে। এ কারণে আমাদের সব সময় কোনটি মৌলিক প্রয়োজন তা ভেবে দেখতে হবে। নিজেদের অযাচিত ইচ্ছা পুরণের জন্য আমরা অনেক সময় নিজেদের কিছু বদ অভ্যাস গড়ে তুলি, যেমন- জাঙ্ক ফুড খাওয়া, রাস্তা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অপ্রয়োজনীয় কেনা কাটা করা বা সামনে কিছু দেখলেই কেনার জন্য ছটফট করা ইত্যাদি। আবার তোমাদের কারও কারও থাকতে পারে অনেক ধরনের বিলাসিতা, যেমন- ঘন ঘন নতুন জামা-কাপড়-জুতা কেনা কিংবা নানা রকম ভিডিও গেম, বন্ধুদের জন্য দামি গিফট ইত্যাদি কেনা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। এ জন্য মনে রাখবে-
আর তাতেই আমাদের সঞ্চয় বাড়বে। হয়তো ২৪ ঘণ্টা পর তোমার চিন্তাটা বদলাতেও পারে। তাই যেকোনো কিছু কেনার আগে দুইবার ভাবতে হবে। অর্থাৎ-
যদি ইচ্ছে হয় কিছু কিনবার
তার আগে ভেবে নিই বার বার।
এবার নিরিবিলি বসে নিজেকে নিয়ে একটু ভাবো। তোমার কোন কাজগুলো করা ঠিক হচ্ছে না, তা নিজেই খুঁজে বের করো। কোনগুলো তোমার জন্য বিলাসী আচরণ তাও ভাবো। এরপর তোমার কোন জিনিসগুলো কেনা প্রয়োজন তার একটি তালিকা বানাও।
এবার চল, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা একটা শপিং গেম খেলি। ৪ টি দোকানে আমাদের জন্য জিনিসপত্র (জামি) সাজানো আছে। প্রথম দোকান: শৌখিন স্টোর দ্বিতীয় দোকান টক ঝাল মিষ্টি তৃতীয় দোকান পেপার টু পেনসিল চতুর্থ দোকান খেলাঘর তোমার হাতে ১০০ টাকা (কাগজের) নেওয়া হলো। এবার তোমরা কেনাকাটা করো। সব দোকান থেকেই কিছু না কিছু কিনতে হবে। কত টাকা বাঁচাতে পারলে তা সবাই মিলে দেখব। (বিক্রেতা যা করবে: তিনজন করে মোট বারজন চার দলে ভাগ হয়ে চার কর্ণারে চলে যাও। প্রতিটি দল শিক্ষকের দেয়া পোষ্টার দিয়ে নিজ নিজ সাজাও। পোস্টারের খালি ঘরে চাইলে অন্য জিনিসের নাম ও ছবি এঁকে নিতে পার। ক্রেতা জিনিস কিনতে জানলে কাগজের ঢাকা নিয়ে যে জিনিসটি কিনতে চায় তা একটি কাগজের টুকরায় লিখে ছেতাকে দাও। ক্রেতা যা করবে: ক্লাসের বাকীরা সবাই ক্রেতা। তোমরা কাগজের টাকা দিয়ে চার স্টল থেকেই পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করো।) |
স্কুল ব্যাংকিং
তোমরা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ কীভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় একসময় বড় সঞ্চয়ে পরিণত হয়। আর এই সঞ্চয় তোমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। তোমাদের সঞ্জয় অনেকেই হয়তো মাটির ব্যাংকে রেখেছ। বিভিন্ন আকারের ও আকৃতির মাটির ব্যাংক অনেক সময় আমরা মেলা থেকে কিনে থাকি। এর মধ্যে আম, গাভি, হাতি এমনকি ডোরাকাটা বাঘের পুতুলকে আমরা পয়সা রাখার মাটির ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। অনেকে আবার বইয়ের পাতায় কিংবা বাঁশের খুঁটির মধ্যেও টাকা এবং কয়েন সংরক্ষণ করে থাকে। একবার ভাবো তো, এভাবে ঢাকা রাখা কতটা নিরাপদ! এমন হতে পারে, বইটি হারিয়ে গেল কিংবা নাড়াচাড়া করতে গিয়ে কোথায়ও পড়ে গেল। মাটির ব্যাংক হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল অথবা ধরো, বাঁশের খুঁটিতে রাখা টাকা কোনো পোকায় কেটে ফেলল!
আবার এখানে সেখানে টাকা রাখলে, অনেক সময় তোমরা ভুলেও যেতে পারো কোথায় রেখেছ। কিংবা ধরো, জামা বা প্যান্টের পকেটে রেখেছ আর সেটি ধোয়ার সময় ভুলে গেলো তখন তোমার জমানো টাকার কী হাল হবে বলতো? কিন্তু তোমরা যদি নিরাপদে তোমাদের সঞ্চয়গুলো রাখতে চাও, তাহলে কোথায় রাখা যায় তা একটু ভেবে দেখো তো! এসো, এবার শিক্ষকের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক কোন ধরনের সংরক্ষণে কী সমস্যা বা সুবিধা তা ভালোভাবে বুঝে ৪.২ ছকটি পূরণ করি ।
ছক পূরণ করে নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছ, ব্যাংকে অর্থ জমা রাখাই সবচেয়ে নিরাপদ ।
বাড়ির বড়দের মধ্যে কাউকে হয়তো তোমরা ব্যাংকে টাকা রাখতে দেখো, তাই না? তোমরা কি জানো, তোমাদের জন্যও ব্যাংকে টাকা রাখার ব্যবস্থ্যা আছে? ১৮ বছরের কমবয়সী যেকোনো শিক্ষার্থী তাদের মা-বাবা অথবা আইনগত অভিভাবকের সহায়তায় যেকোনো ব্যাংকে হিসাব/অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। উক্ত অ্যাকাউন্টে সহজেই একজন শিক্ষার্থী তার সঞ্চয়ের অর্থ জমা রাখতে পারবে। মাত্র ১০০ টাকা জমা করেই তোমরা এ সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারবে। তোমাদের পক্ষে মা-বাবা অথবা আইনগত অভিভাবক এই হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন। তোমাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তোমাদের সম্মতিতে এই হিসাব সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। মজার বিষয় হলো, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য এই ব্যাংকিং সচল রাখার জন্য কোনো (সরকারি ফি ব্যতীত) প্রকার সার্ভিস চার্জ ফি দিতে হয়না এবং আকর্ষণীয় লভ্যাংশ/মুনাফা প্রদান করা হয়। এই হিসাবে তোমরা তোমাদের সঞ্চয়ের অর্থ জমা রাখার পাশাপাশি বৃত্তি/উপবৃত্তির অর্থও সংগ্রহ করতে পারবে। তোমাদের সঙ্গে ব্যাংকের এই হিসাব বা অ্যাকাউন্ট ও লেনদেন ব্যবস্থার নামই হলো স্কুল ব্যাংকিং। স্কুল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা অনেক। এসো একনজরে দেখে নিই সুবিধাগুলো-
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, টাকা জমানোর জন্য কেন স্কুল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করানো হলো? এবার এসো, ছোট্ট একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করি-
সত্যের বাবা জনাব সাগর সরকার মাসে ২০,০০০.০০ টাকা করে বেতন পান এবং প্রতিমাসে সংসারে তার ১৮,৫০০.০০ টাকা খরচ হয়। প্রতি মাসে তার সঞ্জয় কত তা হিসাব করে বের করো। কিন্তু তিনি সঞ্জিত অর্থ জমিয়ে না রেখে এটা-সেটা কিনে খরচ করে ফেলেন। তবে তিনি এভাবে সঞ্চিত এক বছরের অর্থ নিকটস্থ ব্যাংকে জমা রাখলে ৭% লভ্যাংশ পেতেন। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে ৫ বছর পর তার সঞ্চিত অর্থ বৃদ্ধি পেয়ে কত হতো, বলতো? এরকম একটি পরিস্থিতিতে সাগর সরকারের জন্য কিছু পরামর্শ দাও। |
---|
তোমার পরামর্শ
|
এসো কিছু কেনার জন্য একটি আর্থিক পরিকল্পনা করি
কোনো কিছু কিনতে গেলে প্রথমেই আমরা চিন্তা করি কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি কিনতে কত টাকা লাগতে পারে। এরপর চিন্তা করি সেটি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আমার নিকট আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে বাড়তি আর কত টাকা কীভাবে সংগ্রহ করতে হবে, সবকিছুরই একটা সম্ভাব্য হিসাব আমরা করে থাকি। এটিই হলো, কিছু কেনার আর্থিক পরিকল্পনা। এখন কথা হলো আর্থিক পরিকল্পনা কেন প্রয়োজন।
এখন থেকেই যদি আমরা আর্থিক পরিকল্পনা করে কাজ করতে শিখি, তবে ভবিষ্যৎ কর্মজীবন ফলপ্রসুও সুন্দর হতে পারে। এখন আমরা দেখব, কিছু কেনার জন্য আর্থিক পরিকল্পনা কীভাবে করা যেতে পারে, যেমন- ধরো, তোমার অনেক দিনের শখ একটি সুন্দর ক্যারম বোর্ড কেনার। এদিকে বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। হেঁটে যেতে বেশ সময় নষ্ট হয়। এবার তুমি হয়তো চিন্তা করে ঠিক করলে, ক্যারনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সাইকেলের। অর্থাৎ তুমি সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নিলে। এবার তোমাকে সাইকেল কেনার পরিকল্পনা করতে হবে। এ জন্য প্রথমেই দেখতে হবে তোমার কাছে অথবা তোমার স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে কত ঢাকা সঞ্চিত আছে। সাইকেলটি কিনতে আর কত টাকার প্রয়োজন। বাকি অর্থ তুমি কীভাবে সংগ্রহ করবে তা তোমাকে চিন্তা করতে হবে। এবার তুমি বিভিন্ন উৎসবে বড়রা তোমাকে যে উপহার দেয় কিংবা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, রিকশায় না উঠে হেঁটে স্কুলে গিয়ে তুমি অল্প অল্প করে অর্থ সংগ্রহ করতে থাকলে। তোমার সঞ্চিত অর্থ স্কুল ব্যাংকিংয়ের সঞ্চিত হিসাবে জমা করতে থাকলে।
এভাবে সঞ্চিত অর্থ একসময় সাইকেলের মূল্যের সমপরিমাণ হলো। এরপর বাবাকে নিয়ে একদিন ব্যাংকে গেলে এবং সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে বাজারে গিয়ে তোমার পছন্দের সাইকেলটি কিনলে। এভাবে আর্থিক পরিকল্পনা করে আমরা আমাদের ইচ্ছা বা স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপদান করতে পারি। কিছু কেনার আর্থিক পরিকল্পনা করার সময় আমরা কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে পারি।
অর্থাৎ মূল কথা হলো, আমাদের অনেক ধরনের পছন্দ থাকতে পারে। সেখান থেকে প্রয়োজন বিবেচনা করে যেকোনো একটিকে আমরা বেছে নেব। এরপর সেটির জন্য কত টাকা লাগবে, কবে নাগাদ কিনতে চাই এবং প্রতিমাসে কত টাকা করে জমা করতে হবে তা হিসাব করে বের করব। সেই অনুযায়ী ব্যাংকে টাকা জমাতে থাকব। জমানো টাকার সঙ্গে ব্যাংকের বার্ষিক লভ্যাংশ হিসাবে জমা হয়ে একসময় দেখব আমার কাঙ্ক্ষিত টাকার পরিমাণ জমা হয়ে গেছে। বাস, কিনে ফেলব আমার স্বপ্নের জিনিস অথবা দরকারি যেকোনো কাজে টাকাটা কাজে লাগাব।
উদাহরণের ধাপগুলো অনুসরণ করে তোমার প্রয়োজনীয় কোনো কিছু কেনার জন্য একটি আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করো।
কীভাবে আর্থিক ডায়েরিতে হিসাব রাখতে হয় তা নিশ্চয়ই তোমরা সবাই শিখেছ। এর পাশাপাশি কীভাবে প্রয়োজন বুঝে খরচ করে টাকা জমাতে হয় তাও শিখেছ। কিছু কেনার জন্য কীভাবে আর্থিক পরিকল্পনা করতে হয়, তাও এখন সবাই জানো। তাহলে এবার চলো, আমরা একটি প্রজেক্ট হাতে নিই।
প্রজেক্ট ওয়ার্ক
কর্মসূচির নমুনা ক) শ্রেণির সবাই মিলে পিকনিক/বনভোজন করা; খ) সবাই মিলে পাশের কোনো দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যাওয়া; গ) সবাই মিলে ক্লাসে কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবের আয়োজন করা। (তোমরা চাইলে তোমাদের পছন্দমতো অন্য যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনও করতে পারো। নিজেদের করা আর্থিক পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রেণিতে সবাই মিলে টাকা জমাও। একজন শিক্ষার্থী মাসে সর্বোচ্চ ৩০ টাকার বেশি জমাতে পারবে না। কীভাবে সেই টাকা জমানো হলো তা আর্থিক ভায়েরিতে লিপিবন্ধ করো। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সবার টাকা একত্রিত করে মোট টাকার হিসেব করো এবং তা দিয়ে যেকোনো একটা ভিন্নধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করো। প্রয়োজনে শিক্ষকের সাথে পরামর্শ করে নাও।) |
স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট/হিসাব খোলা
তোমাদের নিজের নামে একটা ব্যাংক হিসাব খোলা হলে কেমন হবে বলতো? নিজেরাই তখন সেখানে টাকা জমাতে পারবে। এর জন্য প্রতিটি ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফরম আছে। ফরমের তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হয়।
ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সাধারণত যা যা লাগে, সেগুলো হলো-
এবার এসো, আমরা একটি ব্যাংক হিসাব/ অ্যাকাউন্ট এর নমুনা ফরমে সাধারণত কী কী থাকে তা জেনে নিই।
সঞ্চয় থেকে স্বপ্নপূরণ
ঊষা চাকমার ভীষন ফুটবল প্রীতি। টিমে সে খুব ভালো খেলে। সে খাবার না খেয়ে একদিন কাটাতে পারে, কিন্তু ফুটবল না খেলে একদিনও থাকতে পারেনা। সে সপ্তাহে একদিন দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে দূরে শহরের খেলার মাঠে ফুটবল ক্লাবে খেলতে যায়। বাড়িতে খেলার জন্য তার কোনো ফুটবল নেই, নেই কোনো খেলার বুট কিংবা নীপ্যাড। খেলতে গিয়ে প্রায়ই ব্যথা পেয়ে বাড়ি ফিরে। ব্যথা নিয়েই সে রাত জেগে পড়ালেখা করে আবার সকালে উঠে স্কুলের পথে যাত্রা করে। স্কুলও খুব কাছে নয়। সেই পাহাড়ের ওপর। বাথা নিয়ে এতটা পথ হেঁটে আসা-যাওয়া করা খুবই কষ্টকর। কিন্তু আঁকাবাঁকা এই পাহাড়ি পথে রিকশা, ভ্যানেরও চলাচল নেই। ওর বন্ধুদের দু-একজনের সাইকেল আছে। ওরা পালা করে একেক দিন একেকজনকে লিফট দেয়। একদিন ঊষা ওর বন্ধু রনির সঙ্গে সাইকেলে যেতে যেতে জানতে চাইল তার সাইকেল কেনার বৃত্তান্ত। এর গল্প শুনে ঊষা খুব অনুপ্রাণিত হলো এবং সে ঠিক করল রনির মতো আর্থিক ডায়েরি অনুসরণ করে অর্থ সঞ্চয় করবে এবং তার স্বপ্নের ফুটবল, বুট আর ফুটবল খেলার সামগ্রী কেনার জন্য একটি আর্থিক পরিকল্পনা শুরু করবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। ঊষা টাকা জমাতে লাগল ব্যাংকে। বছর না ঘুরতেই তার জমানো টাকায় সে কিনে ফেলল তার মনের খিদে মেটানোর সামগ্রীগুলো। ঊষার খুশি আর ধরে না। কী যে আনন্দ লাগছে তার। নিজের সঞ্চয় দিয়ে স্বপ্নপূরণে এত সুখা আমরাও পারি, ঊষার মতো নিজেদের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলতে। তাই চলো সবাই-
ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমাই
আমার প্রয়োজন আমি মেটাই
Read more